যখনি যেমনি হোক জিতেনের মর্জি কথায় কথায় তার লাগে আশ্চর্যি। অডিটর ছিল জিতু হিসাবেতে টঙ্ক, আপিসে মেলাতেছিল বজেটের অঙ্ক; শুনলে সে, গেছে দেশে রামদীন দর্জি, শুনতে না-শুনতেই বলে 'আশ্চর্যি'। যে দোকানি গাড়ি তাকে করেছিল বিক্রি কিছুতে দাম না পেয়ে করেছে সে ডিক্রি, বিস্তর ভেবে জিতু উঠল সে গর্জি-- 'ভারি আশ্চর্যি'। শুনলে, জামাইবাড়ি ছিল বুড়ি ঝিনাদায়, ছ বছর মেলেরিয়া ভুগে ভুগে চিনা দায়, সেদিন মরেছে শেষে পুরোনো সে ওর ঝি, জিতেন চশমা খুলে বলে 'আশ্চর্যি'।
আমি যারে ভালোবাসি সে ছিল এই গাঁয়ে, বাঁকা পথের ডাহিন পাশে, ভাঙা ঘাটের বাঁয়ে। কে জানে এই গ্রাম, কে জানে এর নাম, খেতের ধারে মাঠের পারে বনের ঘন ছায়ে-- শুধু আমার হৃদয় জানে সে ছিল এই গাঁয়ে। বেণুশাখারা আড়াল দিয়ে চেয়ে আকাশ-পানে কত সাঁঝের চাঁদ-ওঠা সে দেখেছে এইখানে। কত আষাঢ় মাসে ভিজে মাটির বাসে বাদলা হাওয়া বয়ে গেছে তাদের কাঁচা ধানে। সে-সব ঘনঘটার দিনে সে ছিল এইখানে। এই দিঘি, ওই আমের বাগান, ওই-যে শিবালয়, এই আঙিনা ডাক-নামে তার জানে পরিচয়। এই পুকুরে তারি, সাঁতার-কাটা বারি, ঘাটের পথরেখা তারি চরণ-লেখা-ময়। এই গাঁয়ে সে ছিল কে সেই জানে পরিচয়। এই যাহারা কলস নিয়ে দাঁড়ায় ঘাটে আসি এরা সবাই দেখেছিল তারি মুখের হাসি। কুশল পুছি তারে দাঁড়াত তার দ্বারে লাঙল কাঁধে চলছে মাঠে ওই-যে প্রাচীন চাষি। সে ছিল এই গাঁয়ে আমি যারে ভালোবাসি। পালের তরী কত-যে যায় বহি দখিনবায়ে, দূর প্রবাসের পথিক এসে বসে বকুলছায়ে। পারের যাত্রিদলে খেয়ার ঘাটে চলে, কেউ গো চেয়ে দেখে না ওই ভাঙা ঘাটের বাঁয়ে। আমি যারে ভালোবাসি সে ছিল এই গাঁয়ে।